ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

কাজ সমাপ্তির আগেই ভেঙে ফেলতে হচ্ছে চকরিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স !

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের শুরুতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টের শতবছরের পুরোনো মাতামুহুরী সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’। নির্মাণ কাজের শুরুতে ইতোমধ্যে নতুন মাতামুহুরী সেতুর দুই এপ্রোচ অংশে শতাধিক ব্যক্তিগত মালিকানাধীন দোকানপাট ও বসতঘরসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনো উচ্ছেদ অভিযানের আওতায় রয়েছে ছোট-বড় একাধিক স্থাপনা। তাঁরমধ্যে অন্যতম স্থাপনা হচ্ছে নির্মাণাধীন চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।

চকরিয়া উপজেলা এলজিইডি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মাতামুহুরী সেতুর একেবারে সন্নিকটে চকরিয়া জমজম হাসপাতালের প্রবেশপথে জেলা প্রশাসনের খাসজমিতে ভবনটি নির্মাণ কাজ তদারক করছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)। অর্থায়ন করছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রাণলয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চকরিয়া উপজেলা এলজিইডির অধীনে চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ দি ইঞ্জিনিয়াস্’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে ভবনটির চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আনুসাঙ্গিক কাজ শেষে চলতিবছর ভবনটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উর্ন্মুথ করে দেয়ার কথা থাকলেও মাতামুহুরী সেতুর এপ্রোচ অংশে ভবনটির অবস্থান হবার কারণে উচ্ছেদের আওতায় পড়েছে। ফলে নির্মাণ কাজ সমাপ্তির আগেই ভেঙে ফেলতে হচ্ছে দেড়কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মিতব্য চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টে মাতামুহুরী সেতু ছাড়াও একই সড়কে চারটি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এই চারটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৫ কোটি টাকা।

নতুন মাতামুহুরী সেতুটি হবে ছয় লেনে। সেতুর এপ্রোচ সড়ক নির্মাণে অনেক আগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যে জমি ও স্থাপনার মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জায়গার মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণের সব টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, মাতামুহুরী সেতুর অধিগ্রহনের আওতায় যাদের জমি ও স্থাপনা পড়েছে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জমি মালিক ও স্থাপনা মালিক ক্ষতিপুরণ পেয়েছে। তবে নানা কারণে এখনো যারা ক্ষতিপুরণের টাকা পাইনি, তাঁরাও আইনী জটিলতা কাটিয়ে ক্ষতিপুরণ পেতে যাচ্ছে।

সেই ক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দে দেড়কোটি টাকায় নির্মিত চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ কাজ সমাপ্তির আগে অধিগ্রহনের আওতায় পড়ার কারণে ভেঙে ফেলার নোটিশ দেয়া হলেও ভবনটির বিপরীতে এখনো কোন ধরণের ক্ষতিপুরণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহনের আওতায় যাদের সরকারি স্থাপনা, ব্যক্তিগত জমি বা স্থাপনা পড়েছে, সবাইকে তা ছেঁেড় দিতে হবে। বিনিময়ে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের তরফথেকে ক্ষতিপুরণের টাকা পাবে। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার বেশিরভাগ জমি ও স্থাপনা মালিকের হাতে ক্ষতিপুরণের টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি মাতামুহুরী সেতুর অধিগ্রহনের আওতায় পড়েছে, তাই সেটি ভেঙে ফেলতে হবে। তবে এখনো পর্যন্ত ভবনটির বিপরীতে কেউ ক্ষতিপুরণের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেনি। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি জেলা প্রশাসনের খাসজমিতে নির্মিত হলে ওই জায়গার মালিক জেলা প্রশাসন। সেখানে ভবনটি নির্মাণে যেহেতু এলজিইডি বা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রাণলায় অর্থায়ন করছে, সেহেতু সরকারি ওই প্রতিষ্ঠান সমুহ আবেদন করলে স্থাপনার ক্ষতিপুরণ দেবো।

ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, যদি জেলা প্রশাসন ভবনের জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে দান করেন, বা লিজ দেন, সেক্ষেত্রে জমির মালিক হবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আবেদন করলে আমরা তাদেরকে জায়গার ক্ষতিপুরণ দিতে পারবো। যারা এখনো ক্ষতিপুরণ পায়নি, তাদের টাকা জেলা প্রশাসনে গচ্ছিত আছে।

পাঠকের মতামত: